কোন ল্যাপটপ কিনবেন? মনে রাখতে হবে ল্যাপটপ হলো বহন যোগ্য একটা কম্পিউটার। আর এই কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কাজের জন্য। যেমন- গবেষণা থেকে শুরু করে গান শোনা, সিনেমা দেখা, ছবি আঁকা, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, এনিমেশন, গেমিং ইত্যাদি। বাস্তব জীবনের প্রায় সকল কাজ করতে এই যন্ত্রটি প্রয়োজন। এজন্য নতুন ল্যাপটপ কেনার আগে কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
ল্যাপটপ কেনার শুরুতেই চিন্তা করে নিতে হবে ঠিক কোন ল্যাপটপ কিনবেন । যদি ফ্যাশান করার জন্য বা কাউকে দেখানের জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান, তাহলে বাজার থেকে যেকোন ব্রান্ডের স্টাইলেশ ল্যাপটপ কিনে নিতে পারেন। ল্যাপটপ কেনার সময় যে ১৪টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো:
সূচীপত্র
ল্যাপটপ মডেল, ব্রান্ড :
আপনাকে জানতে হবে কোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ভাল আপনি যদি প্রোগ্রামিং এর জন্য ভালো ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে প্রেগ্রামারদের কাছে পরামর্শ নিতে পারেন। যদি আউটসোর্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভাল বুঝতে চান তাহলে ফ্রিলান্সারদের কাছে পরামর্শ নিন।
আর যদি গ্রাফিক্স এর কাজ করার জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো হবে জানতে চান তাহলে কাছের পরিচিত যেকোন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাছে জিজ্ঞাসা করে নিন। কারণ তারা প্রতি নিয়ত তাদের পেশায় কাজ করছে। সহজেই বলে দিতে পারবে কোন ল্যাপটপ ক্রয় করতে হবে।
ল্যাপটপ হালকা ওজন :
আপনার ল্যাপটপ কেনার যদি মুখ্য বিষয় হয় যদি বহন করা, তাহলে নোটবুক ল্যাপটপ কেনাই ভালো হবে। নোটবুক কেনার সময় ওজন দেখে নেওয়া দরকার। যে ল্যাপটপ গুলো আল্ট্রাবুক হিসেবে চিহ্নিত থাকে সেগুলো কেনাই সবচেয়ে ভালো। কারণ এটা যেমন হালকা তেমন সরু হয়ে থাকে।
সাধারণত যেসকল ল্যাপটপের স্ক্রিন সাইজ ১২.৫- ১৩.৩ এর মধ্যে হয় সেগুলোর ওজন ১ থেকে ১.৫ কেজির মধ্যেই থাকে। তবে মাঝামাঝি দামে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় আল্ট্রাবুক পাওয়া যায় না। আপনার জন্য ১৫.৬ ইঞ্চি স্ক্রিনের ল্যাপটপ হতে পারে পারফেক্ট সাইজের ল্যাপটপ নোটবুক।
ল্যাপটপ স্ক্রিন, ডিসপ্লে :
যেকোন কাজের জন্য ল্যাপটপ কিনলে স্ক্রিনের দিকে আপনাকে সবসময় তাকিয়ে থাকতে হতে পারে। তাই এমন স্ক্রিনের ল্যাপটপ কেনা উচিত যেটার স্ক্রিন চোখের ক্ষতি না করে চোখের সাথে ম্যাচ করে। স্ক্রিনের যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ তাহলো রেজুলেশন।
এক্ষেত্রে ১৯২০*১০৮০ পিক্সেল এর ল্যাপটপ স্ক্রিন সকল কাজের জন্য সঠিক হিসাবে ধরা হয়। আর কেনার আগে অবশ্যই একবার ল্যাপটপটি চালিয়ে দেখে নেওয়া উচিৎ। ল্যাপটপের স্ক্রিন এলইডি? না এলসিডি? কোন গেগেটিভিটি আছে কি-না, কন্ট্রাস্ট কেমন ইত্যাদ বিষয় গুলো জানার জন্য।
ল্যাপটপ র্যাম মেমরি:
বাজারের বিভিন্ন ব্রান্ডের বিভিন্ন কোম্পানির ল্যাপটপ র্যাম মেমরি পাওয়া যায় তার মধ্যে ডিডিআর-৩, ডিডিআর-৪। ১৩০০ মেগাহার্জ থেকে ২৪০০ মেগাহার্জ বাস স্পিড এর র্যাম যেগুলো একটার চেয়ে অন্যটা আরো ভালো। তবে আপনাকে মিনিমাম ১৩০০ মেগাহার্জের ডিডিআর-৩ র্যাম নেওয়া উচিৎ তাহলে মোটামোটি সকল কাজ করা যাবে।
মনে রাখবেন অবশ্যই আপনাকে মিনিমাম ৪ জিবি ১৩০০ মেগাহার্জ অথবা তার থেকে বেশি র্যামের ল্যাপটপ কিনতে হবে, যদি ল্যাপটপকে সুপার ফাস্ট এবং ভালো পারফামেন্স গতিতে চালাতে চান।
হার্ডডিস্ক ড্রাইভ :
ফাস্ট কাজ করার জন্য আপনার ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক বেশি জিবির প্রয়োজন নেই। তবে আপনি যদি বেশি ডেটা সংরক্ষণ করতে চান তাহলে প্রয়োজন মত বেশি জিবি হার্ডডিস্ক নিতে পারেন। তবে সুপার ফাস্ট কাজ করতে ল্যাপটপে ৮০-১২০ জিবি একটা এসএসডি থাকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ বর্তমানে যারা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার কিনছে তার শুধু মাত্র উইন্ডোজ প্রাগ্রামের জন্য একটা এসএসডি ব্যবহার করছে। কারণ হার্ডডিস্ক এর তুলনায় এসএসডি সুপার ফাস্ট কাজ করতে সাহায্য করে। আপনার বাজেট বেশি হলে এইচডিডি+ এসএসডি যুক্ত ল্যাপটপ কিনতে পারেন।
প্রসেসর/সিপিইউ :
ল্যাপটপ নির্বাচন হয়ে গেলে দেখতে হবে প্রসেসরের ব্যাপারটা, বর্তমান বাজারে এএমডি এবং ইন্টেল এই দুই ধরণের প্রসেসর বেশ জনপ্রিয় কারণ দুইটা ব্রান্ডই ভালো। তবে বাজারে এখন ইন্টেলের কোর আই সিরিজের প্রসেসর গুলো বেশি চলছে। কারণ এগুলো প্রসেসর দিয়ে প্রায় সব কাজই করা যায়।
তবে কোর আই ৭ প্রসেসর যুক্ত ল্যাপটপ গুলো কেনা ভালো কারণ এটি সব কাজে ব্যবহার করা যায় ও বেশ ভাল সার্ভিস দিয়ে থাকে। বাজেট মাঝামাঝি হলে কোরআই-৫ বা কোরআই-৩ প্রসেসরের ল্যাপটপ কিনতে পারেন।
প্রসেসর জেনারেশন:
ল্যাপটপের প্রসেসর হলো কম্পিউটারের মূল চালিকাশক্তি। যা মূলত দুইটি কোম্পানি তৈরি করে ১. ইন্টেল, ২.এএমডি। এশিয়াতে ইন্টেল আর ইউরোপে এএমডি প্রসেসর বেশি চলে। জেনারেশন শব্দটা আসলে কোন বিশেষ শব্দ না। প্রতিবার প্রসেসরের আপডেট করা হলে জেনারেশন বাড়ানো হয়। ইনটেল প্রতি বছর যে প্রসেসর তৈরি করে তার টেকনিক কতটা উন্নত, কতটা ছোট, ট্রানজিস্টার গুলো কতটা ক্ষুদ্র, কতটা দ্রুত গতি সম্পূর্ণ, কতটা বেশি দক্ষ, কতটা কম পাওয়ার খরচ করবে তা জেনারেশনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
বর্তমানে ইন্টেলের Core i3, i5, i7 এই ৩টি প্রসেসর সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়। এগুলো থেকেই মুলত জেনারেশন শব্দটি ইন্টেল ব্যাবহার করছে। যার ক্লক স্পিড, ক্যাশ ম্যামরী, পাওয়ার খরচ, ইত্যাদি আপডেট করে জেনারেশন পরিবর্তন করে। সুতরাং জেনারেশন নিয়ে চিন্তা বাদ দিন।
অপারেটিং সিস্টেম :
আপনি যদি লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে চান তাহলে ইন্টেলের প্রসেসর আপনার জন্য সঠিক সব থেকে ভালো হবে। কালি লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করলে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে হার্ডওয়্যার যেন শুধু মাত্র উইন্ডোজের জন্য না হয়। এজন্য কেনার আগে ল্যাপটপ ডিটেইসল ইন্টারনেট অথবা দোকান থেকে জেনে নিতে হবে কি কি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে।
কিবোর্ড, টাচপ্যাড :
আপনি ব্যবহারকারী হিসাবে যে ধরণের কিবোর্ডে সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন অবশ্যই সে কিবোর্ড সম্বলিত ল্যাপটপটি কিনবেন। সাথে সাথে টাচ প্যাড ডিজাইন আপনার জন্য ঠিকআছে কি-না দেখে নিবেন। ল্যাপটপ কেনার সময় অবশ্যই কয়েকটি বিষয় দেখে নেওয়া উচিৎ। যেমন- কিবোর্ডটিতে ব্যাকলাইট আছে কি না। ওয়াটর প্রুফ কি-না, কমফেটেবল কি-না, অন্ধকারেও ল্যাপটপের বোতাম গুলো দেখা যায় কি-না ইত্যাদি। তবে মাঝারি দামের ল্যাপটপের কিবোর্ডে লাইট দেওয়া থাকে।
ল্যাপটপের গ্রাফিক্স:
অনেকে আছে যাদের গ্রাফিক্স সম্পর্কে ধারণা নেই। যেমন গ্রাফিক্স কাজ গুলের মধ্যে রয়েছে ভিডিও এডিটিং, থ্রিডি গ্রাফিক্স, ভারী গেম, অটোক্যাড, অ্যডোবি সিরিজ প্রোগ্রামের কাজে ন্যুনতম কোর আই-৫ এবং ৮ জিবি র্যাম সাথে গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত থাকতে হবে।
যেমন- এনভিডিয়া জিটিএক্স ১০৫০ থেকে শুরু করে ১০৮০ (উচ্চমূল্যের) বা আরও আধুনিক কোনো গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত ল্যাপটপ নিতে পারেন। তবে গান শোনা, সিনেমা দেখা, ইন্টারনেট চালানো, বইপড়া এগুলোর জন্য খুব বেশি দামী, খুব ভাল মানের ল্যাপটপ প্রয়োজন হয় না, ডুয়ালকোর কিংবা কোরআই-৩ প্রসেসর আর ৪ জিবি র্যাম হলেই যথেষ্ট হবে।
গেমিং ল্যাপটপ :
যদি গেম খেলা অথবা খুব ভারী কাজ যেমন- ইমেজ প্রসেসিং বা পরিসংখ্যানের বড় বড় গবেষণা জাতীয় কাজ করতে হয় তাহলে অবশ্যই ন্যুনতম কোরআই-৭ প্রসেসর আর সাথে ২৪০০ মেগাহার্জ ১৬ জিবি র্যাম, এবং গ্রাফিক্স কার্ড সম্বলিত ল্যাপটপ কেনাই ভালো হবে যেমন- আসুসের গেমিং ল্যাপটপ আরওজি স্ট্রিক্স স্কার এডিশন, আসুস আরওজি জেফ্রাস, সেরা পছন্দের গেমিং বা হাই-কনফিগ ল্যাপটপ গুলোর মধ্যে অন্যতম।
ব্যাটারী ব্যাকআপ :
প্রতিটা ল্যাপটপের ব্যাটারির গায়ে যে রেটিং দেওয়া থাকে সেটি দেখে ল্যাপটপের ব্যাটারি কেনা উচিত। সাধারণত বর্তমানে যেকোন ল্যাপটপে ৬-৮ ঘন্টা চার্জ ধরণ ক্ষমতা থাকে তবে যে সকল ব্যাটারীর গায়ে 44Wh বা 50Wh লেখা থাকে সেগুলো বেশি সময় ধরে চার্জ় সংরক্ষণ করতে পারে। বর্তমানে প্রতিনিয়ত আরো ব্যাটারি প্রযুক্তির উন্নয়ন করা হচ্ছে।
ল্যাপটপের অফিসিয়াল ডকুমেন্টরী দেখে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ টাইম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে কেনা উচিৎ। ব্যবহার জেনারেশন ও প্রয়োজন অনুযায়ী এটা বিভিন্ন হতে পারে। তবে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ব্যাকআপ দেওয়া ল্যাপটপ গুলো ভালো হয়।
ওয়্যারলেস নেটওর্য়াক :
ল্যাপটপে ওয়্যারলেস কানেকশন করতে ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথ এর প্রয়োজন হয়। আপনার ল্যাপটপের যদি ওয়াই ফাই অ্যাডাপ্টরের ক্ষমতা কম থাকে তাহলে নেট চালাতে গিয়ে স্পিড কম পাওয়ার কারণে ল্যাপটপ হ্যাং করতে পারে।
এজন্য ল্যাপটপ কেনার আগে জেনে নিতে হবে ডুয়াল ব্যান্ডের অ্যাডাপ্টর যুক্ত ওয়াইফাই যুক্ত আছে কি-না। তাহলে নিশ্চিন্তে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক চালনো যাবে। আর ভালো মনের ব্লুটুথের ক্ষেত্রে এখন বাজারে ব্লুটুথ ৪.o বেশি নির্ভরযোগ্য। তাই আপনি ৪.০ ব্লুটুথ যুক্ত ল্যাপটপটি কিনবেন।
ইউএসবি স্পিড 3.0 :
ল্যাপটপের ইউএসবি ৩.০ পোর্ট এর থেকে ইউএসবি ২.০ অনেক ফাস্ট ডেটা ট্রান্সফার করে। এজন্য ল্যাপটপের পোর্ট গুলো ইউএসবি ৩.০ কি-না তা জেনে নেওয়া উচিত। অবশ্যই বর্তমানে অধিকাংশ ল্যাপটপেই ইউএসবি ২.০ এবং ইউএসবি ৩.০ পোর্ট থাকে।
যদি সকল বিষয় আপনার বাজেটের সাথে মিলে যায় তাহলে সবচেয়ে সুবিধা জনক ল্যাপটপটি কিনতে পারেন। তবে বেশির ভাগক্ষেত্রে বাজেটে মধ্যে ল্যাপটপ নাও মিলতে পারে। ল্যাপটপে অনেক সময় এসডি কার্ড লাগানোর প্রয়োজন হয়ে থাকে এজন্য ল্যাপটপের সাথে এসডি কার্ডের স্লট আছে কি-না তা দেখে ল্যাপটপ কিনুন।
আশা করছি কোন ল্যাপটপ কিনবেন, ভালো ল্যাপটপ কেনার উপায় গুলো জেনে গেছেন। কোন ল্যাপটপ কিনবেন এটা নিয়ে আর হয়ত আপনার কোন কনফিউশন থাকবেনা। লেখাটি ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার করতে ভূলবেন না।
ধন্যবাদ জানাই আপনাকে, ল্যাপটপ সম্পর্কে তুলনা মূলক আলোচনা করা জন্য। আমার ল্যাপটপ কিনার পূর্বে এইসব বিষয় গুলো খেয়াল করা হয়নি এবং এতো কিছু মাথায় নিয়ে কেনা হয়নি। তবে আপনার পরামর্শ পরবর্তীতে কেনার সময় কাজে লাগাবো।
কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ
ভাই অনেক ইনফরমেশন দিয়ে পোস্ট টা লিখছেন তাই ধন্যবাদ।
আমি জানতে চাচ্ছিলাম আমি photoshop cs4 + camtasia + blogging করতে নেট ব্রাওজিং করতে যা যা লাগে তাই ইউজ করতে চাই। এর জন্য কেমন মানের ল্যাপটপ নেওয়া দরকার?
আমি এখন ২ জিবি RAM এর ইউজ করি কিন্তু ফটোশপ ইউজ করতে গেলে হাং করে স্লো হয়ে যায় তাই আনইন্সটল করতে বাধ্য হইছি!!! কিন্তু আমার দরকার সেগুলো।
এখন কেমন কনফিগারের ল্যাপটপ কিনা উচিত কিংবা ডেক্সটপ।
4 জিবি 1600mhz র্যাম.. আর cori3 প্রোসেসর হলেই হবে
Sir after reading this post. All my confusions have gone away,I am really surprised by the quality of your constant posts.You really are a genius, I feel blessed to be a regular reader of such a blog Thanks so much.
Thank you