ইনভার্টার ফ্রিজ কি আপনি জানেন? বর্তমানে কয়েক বছর থেকেই বিভিন্ন কোম্পানি ইনভার্টার টেকনোলজি যুক্ত নতুন এক ধরণের ফ্রিজ বাজারে নিয়ে এসেছে। যা আগে শুধু বিদেশী ব্র্যান্ডের দামী ফ্রিজে ইনভার্টার সুবিধা থাকতো। কিন্তু বর্তমানে দেশীও ব্রান্ড ওয়ালটন, সিঙ্গার, ভিশন, মার্সেল, মিনিস্টার, যমুনা ইত্যাদি ইনভার্টার সুবিধা যুক্ত বিভিন্ন মডেলের ফ্রিজ বাজারে এনেছে। সব মিলিয়ে ইনভার্টার প্রযুক্তি যুক্ত ফ্রিজের সংখ্যা কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশী ব্র্যান্ড গুলো কমদামে ফ্রিজে ইনভার্টার সুবিধা দেওয়ার কারণে নতুন এই প্রযুক্তি এখন সবার হাতের নাগালে চলে আসছে। অনেকেই আমাকে কমেন্ট করেছেন ইনভার্টার ফ্রিজ সম্পর্কে লিখুন। আসলেই কি ইনভার্টার ফ্রিজ ভালো হবে? অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ? তাহলে চলুন জেনেনি ইনভার্টার ফ্রিজ কি? ভালো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার ফ্রিজের সুবিধা অসুবিধা বিস্তারিত।
ইনভার্টার ফ্রিজ
ফ্রিজ এখন প্রায় প্রতিটা ঘরে ব্যবহার হচ্ছে। কারো ঘরে একটি আবার কারো ঘরে ফ্যামেলি অনুযায়ী একাধিক। সমস্যা হলো প্রতিটা ফ্রিজের ব্যবহারকারী থাকে কয়েক জন। যেমন- বাড়ির ৫ থেকে ৬ জন মিলে একটি ফ্রিজ নানা কাজে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে। এভাবে সারাদিন ধরে যার যখন প্রয়োজন সে তখন ফ্রিজ ব্যবহার করে। আর ফ্রিজ ব্যবহার মানেই সারাদিন অনেক বার ফ্রিজের দরজা খোলা আর বন্ধ করা।
ফ্রিজের দরজা অনেক বার খোলা আর বন্ধ করার কারণে ফ্রিজের কম্প্রেসারকে চলতে হয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এজন্য ফ্রিজের বিদ্যুৎ খরচও হয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। শুধুমাত্র এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, ফ্রিজ এমন একটি যন্ত্র যা দিনে ২৪ ঘন্টা, বছরে ৩৬৫ দিন চলতে থাকে, কিন্তু আমাদের ব্যবহৃত নিত্যদিনের আর অন্যকোন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র এমন ভাবে চলে না। ফ্রিজ একটানা চলার কারণে বিদ্যুৎ অনেক বেশি খরচ হয়। আর সেটা কমানোর জন্য ফ্রিজে ইনভার্টার টেকনোলজি ব্যবহার শুরু হয়েছে। ইনভার্টার প্রযুক্তির ফ্রিজ বিদ্যুৎ খরচ অনেক কমিয়ে দেয়। একটু ভেবে দেখুন, যে যন্ত্র দিনে ২৪ ঘন্টা, বছরে ৩৬৫ দিন চলে, সেই যন্ত্র যদি আপনার বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে দেয়, তাহলে আপনার বিদ্যুৎ বিলও অনেকাংশে কমে যাবে।
ইনভার্টার ফ্রিজ কি
ফ্রিজে ইনভার্টার প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে ইলেকট্রিক ডিসি টু এসি রেকট্রিফিকেশন ও মটর স্পিড কন্ট্রোল সিস্টেম থেকে। ইলেকট্রিক ডিসি টু এসি কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যেমে মটরের গতি কমানো, নিয়ন্ত্রণ করার অটোমেটিক সিস্টেমকে বলা যায়। আর এই ফ্রিজের কম্প্রেসারটি ইলেকট্রিক ইনভার্টার প্রযুক্তি সম্পন্ন করে তৈরী করা হয়। এই ধরনের কম্প্রেসারের বিশেষত্ব হচ্ছে, প্রয়োজন অনুযায়ী গতি পরিবর্তন করতে পারে, এমনকি প্রয়োজনে স্বল্প গতিতে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে।
তবে এমন নয় যে ইনভার্টার ফ্রিজের কম্প্রেসার সবসময় চলতেই থাকে, সাধারণ ফ্রিজের মতো এটিও প্রয়োজন অনুযায়ী বন্ধ হয় এবং চালু হয়। আধুনিক ইনভার্টার ফ্রিজের কম্প্রেসার এমন ভাবে তৈরী করা হয়ে থাকে, কম্প্রেসার ফ্রিজ ব্যবহারকারীর ব্যবহারের ধরণ বুঝতে পারে এবং এর উপর নির্ভর করে। ফ্রিজে ইনভার্টার কম্প্রেসারের গতি, চালু কিংবা বন্ধ হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
ইনভার্টার ফ্রিজ কাকে বলে
এককথায় যে ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটরে এডভান্স টেম্পারেচার কনট্রোল সিস্টেম, লো নয়েজ বা শব্দ মুক্ত, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয় তাকে ইনভার্টার ফ্রিজ বলা হয়। ইনভার্টার ফ্রিজে শব্দ দূষণ হয়না, টেম্পারেচার সমানভাবে অটোমেটিক নিয়ন্ত্রণ করে ফ্রিজ ঠান্ডা রাখে। আর কম্প্রোসার বার বার অন অফ নাহয়ে প্রয়োজন মত গতি কম বেশি করে ফ্রিজের কুলিং সিস্টেম চালু রাখে ফলে অনেক বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়। ফলে যেকোন ইনভার্টার ফ্রিজ অনেক দিন চলে সহজে নষ্ট হয় না। আর এই সকল অটোমেটিক সুবিধা যুক্ত ফ্রিজকে আমরা ইনভার্টার ফ্রিজ বলতে পারি।
ফ্রিজে ইনভার্টারের কাজ
আধুনিক ইনভার্টার প্রযুক্তিতে ফ্রিজের কন্ট্রোল মাদারবোর্ডে স্থাপিত মাইক্রো প্রসেসরের মাধ্যমে কম্প্রেসারের গতি নিয়ন্ত্রিত হয়। ফ্রিজের ভিতরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন অনুযায়ী অন-অফ বা কম গতিতে কম্প্রেসার চলে বিধায় এতে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এছাড়াও, সাধারণ ইন্ডাকশন প্রযুক্তির তুলনায় ইনভার্টার প্রযুক্তির কমপ্রেসার চালু হতে প্রায় ৮-১০ গুণ কম বিদ্যুৎ লাগে এবং কম ভোল্টেজেও চলে।
মনে করুন, কোন কারণে আপনার ফ্রিজের দরজা বেশি সময় খোলা রাখতে হচ্ছে, সেই সময় ইনভার্টার ফ্রিজটি স্বয়ংক্রিয় ভাবেই এর ইনভার্টারের গতি বাড়িয়ে খাবার ঠান্ডা রাখবে, আবার কম সময় দরজা খোলা রাখলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে এর ইনভার্টারের গতি প্রয়োজন অনুযায়ী কমিয়ে দেবে। কিন্তু সাধারণ ফ্রিজে তাপমাত্রা কমিয়ে দিলে দেখা যায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঠান্ডা হচ্ছে, আবার তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিলে দেখা যায় খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আবার, রাতের বেলায় ঘটে ভিন্ন ঘটনা। রাতে ফ্রিজের দরজা প্রায় খোলা হয় না বললেই চলে। তাই রাতে ইনভার্টার কম্প্রেসারটিও চলে অনেক ধীর গতিতে, ঠিক যতটুকু না হলেই নয়। তাই ইনভার্টার ফ্রিজে বিদ্যুৎতের খরচও কমে যায় অনেক বেশি।
সাধারণ ফ্রিজের সিস্টেম
আসলে সাধারণ ফ্রিজ কি সিস্টেমে কাজ করে সেটা নিয়ে খুব বেশি বলার প্রয়োজন নেই কারণ আমরা সবাই কমবেশি জানি এ ধরণের ফ্রিজ সম্পর্কে। তবুও ইনভার্টার ফ্রিজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে সাধারণ ফ্রিজের মূল কিছু বিষয় তুলে ধরা উচিত।
সাধারণ ফ্রিজে যে ইনভার্টার ব্যবহার করা হয় সেগুলো ইনভার্টার কম্প্রেসারের মতো গতি পরিবর্তন করতে পারে না। এরা নির্দিষ্ট গতিতে চলে, কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় ভাবে গতি পরিবর্তন করতে পারে না। সাধারণ ফ্রিজ নির্দিষ্ট সময় পর পর চালু কিংবা বন্ধ হবার মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। একটু লক্ষ করে দেখবেন সাধারণ ফ্রিজ গুলো কিছুক্ষণ বেশ শব্দ করে চলে আবার একেবারে নিঃশব্দ হয়ে যায়।
ইনভার্টার ফ্রিজের সুবিধা
চলুন আমরা ইনভার্টার ফ্রিজ এবং সাধারণ ফ্রিজের সুবিধা-অসুবিধা গুলো মিলিয়ে দেখি, যাতে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আপনার জন্য কোন ফ্রিজটি কেনা সবচেয়ে ভালো হবে।
সাধারণ ফ্রিজ একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলতে থাকে ফ্রিজের ভিতরে প্রয়োজনীয় কুলিং হতে যতক্ষণ সময় লাগে ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত। তারপর বন্ধ হয়ে আবার প্রয়োজন অনুযায়ী চালু হয়। অন্যদিকে ইনভার্টার ফ্রিজের কম্প্রেসার কম গতিতে চলতে পারে দীর্ঘক্ষণ ধরে আর কম গতিতে চলার কারণে বিদ্যুৎ খরচ হয় অনেক কম এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সাধারণ ফ্রিজের চেয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
নরমাল ফ্রিজ যদি সারাদিনে কিছুটা বেশি ব্যবহার হয় তাহলে কম্প্রেসার বেশি সময় ধরে চলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, এতে কম্প্রেসারের উপর বেশি চাপ পড়ে ফলে নষ্ট হবার সম্ভাবনাও থাকে। অন্যদিকে, ইনভার্টার টেকনোলজির ফ্রিজ সারাদিনে কম বা বেশি ব্যবহার খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী নিজের চলার গতি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এর উপর চাপ কম পড়ে ফলে নষ্ট হবার সম্ভাবনাও অনেক কম থাকে।
সাধারণ ফ্রিজ কম্প্রেসারের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে বারবার চালু ও বন্ধ হয় ফলে বিদ্যুৎ খরচ অনেক বেশি হয়। অন্যদিকে, ইনভার্টার ফ্রিজ গতি কমিয়ে বা বাড়িয়ে চলতে থাকে। বারবার অন অফ হয় না তাই বিদ্যুৎ খরচ হয় সাধারণ ফ্রিজের তুলনায় অনেক কম।
নরমাল ফ্রিজের কম্প্রেসার প্রতিবার চালু হবার সময় বেশ কিছুটা শব্দ করে, অন্যদিকে ইনভার্টার ফ্রিজের কম্প্রেসার ধীর গতিতে চালু হওয়ার কারণে খুব অল্প শব্দ হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, ইনভার্টার ফ্রিজ কোনাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ তবে বাজারে কয়েক ধরণের গ্যাস যুক্ত ফ্রিজ পাওয়া যাচ্ছে। আপনি যে ইনভার্টার ফ্রিজটি কিনবেন তা R134a গ্যাস যুক্ত কি-না জেনেনিন। কারণ এটি হলো পরিবেশ বান্ধব একটি রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস যা বর্তমাণে বেশির ভাগ ফ্রিজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ধন্যবাদ
আপনাকে স্বাগতম