আপনার ঘরে যদি একটা সিলিং ফ্যানের সমস্যা থাকে, তাহলে সে ফ্যানটি হতে পারে আপনার এবং আপনার পরিবারের গরমের সহযোগী সঙ্গী। আর হঠাৎ যদি চলতে চলতে সে সঙ্গী সিলিং ফ্যানটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন আপনার অবস্থা হবে খারাপ, মেজাজ হবে গরম। আর সে সময় যদি আপনি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের ফ্যানটি ঠিক করে ফেলতে পারেন তাহলে তো আপনি হবেন হিরো । তাই আজকের বিষয় হঠাৎ সিলিং ফ্যান বন্ধ হলে কি করবেন।
সিলিং ফ্যান প্রধানত যে সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে যায় :
প্রচন্ড গরমে সিলিং ফ্যান বেশি চালানো হয় এজন্য সিলিং ফ্যানের উপর ওভার লোড পড়ে, ফলে গরমের সময় সিলিং ফ্যানের সমস্যা বিভিন্ন ভাবে দেখা দেয়। যেগুলো অনেক সময় ছোট-খাটো সমস্যা বলে বিবেচিত হয়। তবে সব সমস্যার মধ্যে প্রথম চারটা সমস্যার সমাধান আপনি নিজেই করতে পারেন। কারেন্ট সম্পর্কে আপনার যদি বেসিক নলেজ বা জ্ঞান থাকে তাহলে একটু সর্তকতার সাথে কাজ করে আপনার সিলিং ফ্যানটি ঠিক করে ফেলতে পারেন।সিলিং ফ্যান সাধারণত যে যে সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে যায় সেগুলো হলো:-
- সু্ইচ পুড়ে যায়।
- রেগুলেটর পুড়ে যায়।
- ক্যাপাসিটর নষ্ট হয়ে।
- ফ্যানের স্পিড কমে যায়।
- বিয়ারিং জ্যাম হয়ে ফ্যান আটকে যায়।
- ফ্যানের কয়েল জ্বলে যায়।
আপনার সিলিং ফ্যানটি হঠাৎ নষ্ট হলে আপনি প্রথমত পরীক্ষা কি কি করে দেখবেন তার একটি ধারবাহিক আউটলাইন জেনেনি, যেগুলো ধারাবাহিক ভাবে পরীক্ষা করলে আপনার সিলিং ফ্যানের সমস্যা টি আপনি নিজেই ঠিক করে ফেলতে পারবেন।
[বিঃ দ্রঃ- সিলিং ফ্যান পরিক্ষা বা সিলিং ফ্যানের কাজ করার আগে অবশ্যই আপনার বাড়ির মেইন সুইচ অফ করে নিবেন। আর করেন্ট সম্পর্কে আপনার যদি বেসিক ধারণা না থাকে তাহলে আপনার দ্বারা উক্ত কাজ সম্ভব নয়, নিকটস্ত ইলেক্ট্রিশিয়ান দ্বারা আপনার সিলিং ফ্যানটি ঠিক করিয়ে নিবেন।]
প্রয়োজনীয় টুলস সমূহ:
কাজ শুরু করার আগে আপনাকে কিছু টুলস্ এর ব্যবস্থা করতে হবে যেগুলো দিয়ে আপনি সহজে কাজটি করে নিতে পারেন। আর যদি তা আপনার কাছে আগে থেকে থাকে তাহলে তো আর কোন সমস্যাই নেই যেগুলো হলো:
- একটা ভালো টেস্টার, (মিডিয়াম)
- একটা মাইনাস স্কু ড্রাইভার (মিডিয়াম)
- একটা ভালো মানের কাভার যুক্ত প্লাস (মিডিয়াম)
- আর সম্ভব হলে একটা মিডিয়াম সেলাই রেঞ্জ (মিডিয়াম)
এ টুলস্ গুলো যদি আপনার বাড়িতে কিনে রাখতে পারেন, দেখবেন মাঝে মাঝে এগুলো আপনার বিভিন্ন কাজে লাগছে, তাই এসব টুলস্ বাড়িতে রাখা অত্যন্ত দরকার। যেকোন সময় দরকার হতে পারে।
ধাপ-১ ইলেক্ট্রিক্যাল সুইচ পরিক্ষা ও পরিবর্তন:
প্রথম সমস্যার মধ্যে আপনার ফ্যানের সুইচ পুড়ে যাওয়া বা লুজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই আপনি প্রথমে সুইচটা ভালো ভাবে পরিক্ষা করে দেখবেন ঠিক আছে কি-না। তারপর দেখবেন যে সুইচ দিয়ে কারেন্ট ফ্যানে যাচ্ছে কি-না। এজন্য একটা টেস্টার নিবেন এবং ফ্যানের কানেকশন খুলে সুইচ দিয়ে দেখবেন যে সেখানে কারেন্ট যাচ্ছে কি-না। যদি কারেন্ট যায় তাহলে বুঝবেন ফ্যানের সমস্যা আছে। আর যদি কারেন্ট না যায় তাহলে ধারাবাহিক ভাবে আগে সুইচ, তার পর রেগুলেটর, তার পর সংযোগের তার, পরিক্ষা করতে হবে। যেটা নষ্ট থাকবে সেটা লাগিয়ে নিবেন। আর যদি দেখেন ফ্যানে কারেন্ট আসছে কিন্তু ফ্যান চলছে-না। তখন ফ্যানটি খুলে নিচে নামিয়ে নিবেন।
চিত্র: ইলেক্ট্রিক্যাল সুইচ
ধাপ-২ রেগুলেটরের পরীক্ষাও পরিবর্তন:
দ্বিতীয় সমস্যার মধ্যে যে সমস্যাটি সিলিং ফ্যানের সবচেয়ে বেশি হয় সেটা হলো রেগুলেটর সমস্যা, তাই এককথায় বলা যায় ফ্যান বন্ধ হলে আগে রেগুলেটর পরীক্ষা করে নিতে হবে। কারণ গরমের সময় সিলিং ফ্যান বেশি চলে এজন্য ফ্যানের রেগুলেটরের উপর কারেন্টের চাপ বেশি পড়ে ফলে সহজে রেগুলেটর পুড়ে যায়। বাজারে রেগুলেটরের দাম ৫০-৬০ টাকা, ৬-১২ মাসের গ্যারান্টি যুক্ত রেগুলেটর পাওয়া যায়। যেটা আপনি সহজে আশে-পাশের দোকান থেকে কিনে লাগিয়ে নিতে পারেন। তবে রেগুলেটর বা সুইচ লাগানোর আগে অবশ্যই মেইন সুইচ বন্ধ করতে ভূলবেন না। যদি ভূলে যান তাহলে শক্ খাওয়ার সম্ভবনা থেকেই যাবে।
চিত্র: ফ্যান রেগুলেটর
ধাপ-৩ ক্যাপাসিটর পরীক্ষা ও পরিবর্তন:
অনেক দিন সিলিং ফ্যান না চালানোর কারণে ফ্যানের ক্যাপাসিটর নষ্ট হয়ে যায়। এবং ক্যাপাসিটরের কারণে ফ্যানের গতি কমে যায়। আপনি জানেন কি ক্যাপাসিটর ফ্যানে কি কাজ করে? কারেন্ট সংগ্রহ করে ফ্যানের গতি বৃদ্ধি করাই ক্যাপাসিটরের প্রধান কাজ। কারণ ক্যাপাসিটর ছাড়া ফ্যানের গতি বাড়ানো সম্ভব নয়। সিলিং ফ্যানের ক্যাপাসিটর সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে যথা- 2.5 এবং 3.5। সাধারণ ছোট ফ্যানে 2.5 মানের ক্যাপাসিটর থাকে এবং ভালো মানের 56 সাইজের বড় ফ্যানে 3.5 মানের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয়।
যদি দেখেন ফ্যান ধীরে ঘুরছে তাহলে ফ্যানের ক্যাপাসিটর পরিবর্তন করলে আবার গতি বেড়ে যাবে। ক্যাপাসিটর পরিক্ষা করার জন্য আপনি ক্যাপাসিটর টি খুলে নিকটস্ত কোন ইলেক্ট্রিক্যালের দোকানে নিয়ে যাবেন তাহলে তার পরিক্ষা করে দিবে এটা সাধারণত সিরিজ সংযোগের মাধ্যমে পরিক্ষা করতে হয়। কিভাবে পরীক্ষা করতে হয় তার একটি ভিডিও তৈরী করে আপনাদের দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ফলো করুন। আর সিলিং ফ্যানের ক্যাপসিটর ব্যবহার করা হয় ফ্যানের গতি বাড়ানের জন্য। আপনি যদি ক্যাপাসিটর ছাড়া ফ্যান অন করেন তাহলে ফ্যান আসতে আসতে ঘুরবে। ক্যাপসিটর সিলিং ফ্যানের শক্তি বাড়িয়ে দেয় ফলে সিংলিং ফ্যানের গতি বেড়ে যায়।
সিলিং ফ্যানের ক্যাপাসিটর লাগানোর নিয়ম:
সিলিং ফ্যানের ক্যাপাসিটর লাগানো তেমন কঠিন কাজ নয়। কারণ সিলিং ফ্যানের ক্যাপসিটরের কোন নেগেটিভ-পজেটিভ থাকে না। আগের টা খুলে একই ভাবে নতুন টা লাগিয়ে দিলেই হয়ে যাবে। তবে আগে মেইন সুইচ অফ করে নিবেন তার পর ফ্যানের ক্যাপসিটরের মুখের কানেক্টর স্কু ড্রাইভার দিয়ে শর্ট করে কারেন্ট ডিসচার্জ করে নিতে হবে। কারণ যদি ক্যাপাসিটরের কারেন্ট থাকে। আগের অনেক বার বলেছি ক্যাপসিটরের কারেন্ট থাকে। তার পর পুরাতন ক্যাপাসিটরটা খুলে ফেলে নতুন ক্যাপাসিটরের তার ভালো ভাবে জুডে দিয়ে ব্লাকটেপ লাগিয়ে কাভার সেট করে দিবেন।
চিত্র: ফ্যান ক্যাপাসিটর
ধাপ-৪ সংযোগের তার পরীক্ষা ও পরিবর্তন:
অনেক সময় ফ্যান লাইনের তার পুড়ে যায়। এজন্য একটা টেস্টার অথবা অ্যাভোমিটারের মাধ্যমে আপনার তারের সংযোগটি পরিক্ষা করে নেওয়া ভালো। কারণ অনেক সময় দেখা যায় সব ঠিক আছে কিন্তু ফ্যানের সংযোগ লাইনের তারের সমস্যা। এজন্য ধারাবাহিক ভাবে অর্থাৎ আগে সুইচ, তার পর রেগুলেটর, তার পর সংযোগের তার, তার পর ফ্যান, পরীক্ষা করবেন। বার বার ধারাবহিকতার কথা বলার একটাই কারণ, ধারাবহিক ভাবে পরীক্ষা করলে সহজে সমস্যা খুজে বের করা যাবে এবং সহজে সমাধান করা যাবে ফলে ঝামেলা কম হবে।
ধাপ-৪ ফ্যানের বিয়ারিং পরীক্ষা ও পরিবর্তন:
ফ্যানের বিয়ারিং সমস্যা কিভাবে বুঝবেন? ফ্যানের বিয়ারিং সমস্যা হলে সাধারণত যে সমস্যা গুলো দেখা দেয় তাহলো: ১। ফ্যানে অনেক আওয়াঁজ হবে, বিয়ারিং ভেঙ্গে গেলে কট-কট আওয়াঁজ হবে। ২। ফ্যান সহজে ঘুরবে না, জ্যাম হয়ে যাবে দিয়ে থেমে যাবে।
[বিঃদ্রঃ যদি এভাবে ফ্যান জ্যাম হয়ে যায় এবং বেশিক্ষণ করেন্ট প্রবাহ থাকে তাহলে আপনার ফ্যানের কয়েল জ্বলে বা পুডে যেতে পারে। তাই ফ্যান বন্ধ হলে ভালো ভাবে পরীক্ষা করা ছাড়া সুইচ অন করা যাবেনা]
ধাপ-৫। ফ্যানের কয়েল পরীক্ষা ও পরিবর্তন:
শেষ ধাপে সব কিছু- সুইচ, রেগুলেটর, সংযোগের তার এবং ক্যাপাসিটর ঠিক থাকার পরেও যদি ফ্যান না চলে তাহলে বুঝবেন ফ্যানের কয়েলের সমস্যা হয়েছে। তখন আপনি ফ্যানটি খুলে নিকটস্ত ফ্যানের মেকারের কাছে নিয়ে যাবেন, কারণ কয়েল বা ফ্যানের ভিতরে কিছু নষ্ট হলে সবার দ্বারা ঠিক করা সম্ভব নয়। এটা একমাত্র দক্ষ অভিজ্ঞ ফ্যানের মেকার ঠিক করতে পারবে। ফ্যানের সমস্যা হলে বেশির ভাগ সময় শেষ ধাপে যাওয়া লাগেনা। উপরের কয়েকটা ধাপের মধ্যে আপনার ফ্যান সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
[বিঃ দ্রঃ- সিলিং ফ্যান পরীক্ষা বা সিলিং ফ্যানের কাজ করার আগে অবশ্যই আপনার বাড়ির মেইন সুইচ অফ করে নিবেন। আর করেন্ট সম্পর্কে আপনার যদি বেসিক ধারণা না থাকে তাহলে আপনার দ্বারা উক্ত কাজ সম্ভব নয়, নিকতস্ত ইলেক্ট্রিশিয়ান দ্বারা আপনার সিলিং ফ্যানটি ঠিক করিয়ে নিবেন।]
ফ্যানের সমস্যা নিয়ে আপনাদের যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আমাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমি অবশ্যেই আপনার সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো
সব ফ্যানে কি সব ক্যাপাসিতার চলে না?
আমার ফ্যানের ক্যাপাসিটার ২.৫mf এটা ৩.৫mf করা যাবে না? ফ্যান স্লো ঘরে!
চলে.. কিন্তু সঠিক এমএফডি ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা উচিৎ.. নতুন ফ্যানে যে ক্যাপাসিটর থাকে সেটাই লাগতে হবে। ফ্যান অনেক পুরোনো হলে আমরা ২.৫mf পরির্বতে ৩.৫mf ব্যবহার করি ফলে ফ্যান একটু জোরে ঘুরে। এছাড়া ফ্যানের বিয়ারিং জ্যাম হলে বা রেগুলেটর খারাপ হলে বা ভোল্টেজ কমে গেলে ফ্যান আসতে ঘুরে থাকে। দরকার হলে নতুন ক্যাপাসিটর পরিক্ষা করে লাগাতে হবে।
Cilling Fan Onek Gorom Hole ki koronio? Karon Fan tu onek opore thake amra sadaronoto er temperature ta buji na tai bolty o pari na j kmon Gorom holo, se khetre besi gorom hole ki koronio? R gorom ta ki Capacitor er jonno Hoi kina Ans Please.
সব সিলিং ফ্যান স্বাভাবিক গরম হয়ে থাকে, আপনি শুধু দেখুন গরম হয়ে ধুয়া বের হচ্ছে কি-না, আর ঠিক মত চলছে কি-না, যদি ঠিকমত ফ্যান চলে তাহলে আপনার ফ্যান ঠিক আছে। আর ধুয়া বের হলে বুঝতে হবে কয়েল শর্ট অথবা ক্যাপাসিটর আছে।
সিলিংফ্যানের সম্যসা
আমার সিলিং ফ্যান এ লাইন দুটো পজিটিভ হয়ে গেছে। এটা কোন কারনে হয়েছে৷
ফ্যানের কয়েল অথবা অন্য কিছু শর্ট হয়েছে..
আসসালামুআলাইকুম..ভাই আমার ফ্যান চলতি অবস্থায় হঠাৎ স্পিডকমে যায় আবার কিছুক্ষন চলার পর বেড়ে যায় সুইচ রেগুলেটর বদলায়ছি সমাধান হয়নি।আপনার উওরের অপেক্ষা?
ক্যাপাসিটর পরিবর্তন করে দেখুন.. যদি ঠিক না হয় তাহলে বুঝতে হবে ভিতরে কোন সমস্যা আছে, বিয়্যারিং জ্যাম হতে পারে