বসন্তের এই গরমে আপনি যদি ভেবে থাকেন ভালো ব্রান্ডের কোন একটি এসি ক্রয় করবেন, তাহলে এসি কেনার আগে ভালো মানের এসি চেনার উপায় ও নতুন এসি কেনার দশটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টিপস্ আকারে জেনে রাখুন। তাহলে এসি কেনার আগে অনেক টাকা লোকশানের মূখমুখি হওয়া থেকে বেঁচে যাবেন। নতুবা ভূল-ভাল এসি ক্রয় করে অনেক বিদ্যুৎ বিল ও এসিতে ঠান্ডা না হওয়ার মত বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে যাবেন। তাই একটু সময় নিয়ে নতুন ভালো এসি চেনার উপায় গুলো জেনে নিন তারপর এসি ক্রয় করুন।
এসি কি কাকে বলে :
এসি কথাটির পুরো অর্থ হলো- এয়ার কান্ডিশনার বা এয়ার কুলার। সুতরাং যে যন্ত্রের সাহায্য ঠান্ডা বাতাস পাওয়া যায় বা ঘর ঠান্ডা করা হয় তাকে এককথায় এসি বা এয়ার কান্ডিশনার বলে। এসি বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে যেমন- স্পিলিট এসি, প্রোটেবল এসি, উইন্ডো এসি ইত্যাদি আর এসব এসি তৈরী করছে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি। তারমধ্যে অন্যতম সেরা ওয়ালটন, এলজি, স্যামস্যাং, জেনারেল, গ্রি, মিডিয়া, ইত্যাদির মত কোম্পানি।
এয়ার কন্ডিশনার সার্ভিসং শিখুন
ভালো এসি চেনার উপায় :
আপনি নিশ্চিন্তে আপনার বাজেটের মধ্যে যেকোন ভালো ব্রান্ডের এসি ক্রয় করতে পারেন। তবে ভালো মানের এসি এর কিছু গুন বৈশিষ্ট থাকে যেগুলো দেখে জেনে আপনি দেশি-বিদেশী যেকোন ব্রান্ডের এসি অনায়াসে ক্রয় করতে পারেন। নিচে আমি ভালো এসি চেনার উপায় গুলো পয়েন্ট আকারে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে বোঝানোর চেষ্ট করেছি। আশা করছি বিষয় গুলো পড়লে আপনার কোন এসি কেনা উচিৎ, আর কোন এসি কেনা উচিৎ নয়, পরিস্কার বুঝতে পারবেন।
ভালো মানের এসি কোনার নিয়ম :
মার্কেটে যেকোন ব্রান্ডের নতুন এসি গুলো ক্রয় করার আগে আপনাকে নিচের দশটা বিষয় খোয়াল রাখতে হবে। তাহলে আপনার অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে, স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, ঘর ঠিকমত ঠান্ডা হবে, খরচ কমে আসবে, আরো বিস্তারিত পয়েন্ট গুলো পড়ে এসি কেনার ১০টি বিষয় জেনে নিন।
নতুন এসি কেনার ১০টা টিপস্ জানুন :
- এনার্জি স্টার মার্ক করা বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ী এসি কি-না জানুন ।
- ঘরের সাথে এসির বাতাসের টনের সঠিক পরিমাণ জেনে এসি কিনুন।
- এসি ইনস্টলেশন রি-ইনস্টলেশন খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- এসিতে কোন শব্দ হচ্ছে কি-না দেখুন অন্য এসির সাথে তুলনা করুন।
- বাজে একটু বেশি হলে ঠান্ডা-গরম রিভার্স সাইকেল মোড এসি কিনুন।
- ঘরে সহজে স্থান্তুরের জন্য একটা পোর্টেবল এসির ব্যবহার ক্রয় করুন।
- এসিতে দুষিত বাতাস কারণ ফিল্টার সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা নিতে হবে।
- আপনার এসিতে বাতাস নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টা আছে কি-না জানুন।
- যে কোম্পানির এসি ক্রয় করছেন তার সার্ভিস ও সুবিধা সম্পর্কে জানুন।
- আপনার অঞ্চলের বাতাসের আদ্রতার পরিমাণ জেনে এসি কিনুন ।
ভালো এসি চেনার ১০টি উপায় :
এতক্ষণ উপরে সংক্ষেপে ভালো মানের এসি চেনার ১০টি উপায় সম্পর্কে জানলাম। আর এখন আমরা ভালো মানের এসি চেনার উপায় গুলো নিয়ে বিস্তারিত ভাবে জানবো। কারণ সংক্ষেপে জানলে বিষয় গুলো পরিস্কার হবে না। আপনি যদি এসি ক্রয় করতে ইচ্ছুক থাকেন তাহলে প্রতিটা বিষয় পরিস্কার জানা জেনে নিন হয়ত আপনার অনেক উপকারে আসতে পারে।
বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ী এসি :
এসি কেনার আগে অবশ্যই বিলের কথাটা মাথায় রাখতে হবে কারণ আপনি যদি বিলের কথা মাথায় না রেখে এসি ক্রয় করে ফেলেন, তাহলে মাসের শেষে আপনাকে অনেক টাকা বিলের জন্য গুনতে হবে। এজন্য বিল কম আসে এমন স্টার মার্ক করা এসি ক্রয় করুন। যেটা আপনি বুঝতে পারবেন এসির গায়ে স্টার মার্ক দেখে। মনে রাখবেন এসির গায়ে যত বেশি স্টার থাকবে ততো বিল কম আসবে। বিলের রেটিং স্টার মার্ক করে থাকে বিউরো এনার্জি লিমিটেড। তাই এনার্জি সেভিং স্টার মার্ক দেওয়া এসি ক্রয় করুন।
ঘরের সাথে এসির মাপ :
এসি কেনার আগে জানতে হবে আপনার রুমের সাথে কতটন এসি প্রয়োজন বা রুমের মাপে কতটন এসি দিলে সঠিক মাত্রায় ঠান্ডা পাওয়া যাবে। যদি মনে করেন যত বড় এসি হবে ততো বেশি ঠান্ডা হবে তাহলে ভূল করবেন। আপনি যদি আপনার রুমের মাপ জেনে নিয়ে এসির দেকানে গিয়ে বলেন তাহলে তারা আপনাকে কত টনের এসির প্রয়োজন বিস্তারিত বলে দিবে। তবে আপনাকে যেন তারা না ঠকাতে পারে সেজন্য আপনাকেও কিছুটা জানতে হবে।
এসির টনের সাথে রুমের মাপের তালিকা :
- ১২০ স্কয়ার ফিট রুমে আপনি .৭৫ টন এসি ব্যবহার করতে পারবেন।
- ১২১ স্কয়ার ফিট থেকে ১৫৯ স্কয়ার ফিট হলে ১ টন এসি লাগাতে পারবেন।
- ১৫১ স্কয়ার ফিট থেকে ২৫০ স্কয়ার ফিট হলে ১.৫ টন এসি লাগতে হবে।
- ২৫১ স্কয়ার ফিট থেকে ৪০০ স্কয়ার ফিট হলে ২ টন এসি লাগতে পারবেন।
- এর থেকে বেশি বড় রুম হলে ঘরের মাপ নিয়ে শো-রুমে কথা বলুন।
এসি ইনস্টলেশন রি-ইনস্টলেশন খরচ :
যেকোন এসি কেনার আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে এসি ইন্টলেশন চার্জ কত? কোম্পানির পক্ষ থেকে ফ্রি ইনস্টলেশন আছে কি-না। রি-ইনস্টলেশ চার্জ কেমন লাগে এসব ব্যাপারে। কারণ এসি ইনস্টলেশনের থেকে স্পিলিট এসি রি-ইনস্টলেশন চার্জ অনেক বেশি লাগে। আপনি যদি বাব বার বাড়ি পরিবর্তন বা রুম পরিবর্তন করে থাকেন তাহলে আপনি উইন্ডো এসি ক্রয় করতে পারেন। কারণ স্পিলিট এসির চেয়ে উইন্ডো এসির রি-ইনস্টলেশন খরচ অনেক কম হয়ে থাকে। তবে মনে রাখবেন ঘর বড় হলে উইন্ডো এসি কেনা যাবে না।
এসির শব্দ কোয়ালিটি কেমন :
নতুন এসি বাড়িতে ইনস্টল করার আগে সম্ভব হলে আগে চালিয়ে দেখে নিবেন আওয়াজ হচ্ছে কি-না। কারণ স্পিলিট এসিতে অনেক বেশি আওয়াজ হয় না, তাই নিরিবিলি শান্তিতে ঘুমানো যায়। যদি আপনার এসিতে শব্দ হয় তাহলে সেটা মোটেও ভালো কথা নয়। স্পিলিট এসিতে বেশি শব্দ হলে কোম্পানির সাথে কথা বলে পরিবর্তন করে নিন।
ঠান্ডা-গরম রিভার্স সাইকেল মোড এসি :
আপনি যে এসিটা ক্রয় করবেন তাতে রিভার্স সাইকেল মোড আছে কি-না জেনে নিন। রিভার্স সাইকেল মোর্ড হলো শীতে গরম বাতাস দিবে এবং গরমে ঠান্ডা বাতাস দিবে। তবে রিভার্স সাইকেলের এসির দাম তুলনা মূলক বেশি হয়। আমি বলবো আপনার বাজেট যদি একটু বেশি হয় তাহলে রিভার্স সাইকেলের এসি ক্রয় করুন। তাহলে সারা বছর এসি ব্যবহার করতে পারবেন। নতুবা আপনার এসি ছয় মাস চলবে ছয় মাস বন্ধ থাকবে।
ঘরের জন্য পোর্টেবল এসির ব্যবহার :
আপনি যদি বাড়ির সব ঘরের জন্য এসি ব্যবহার করতে চান তাহলে অনেক টাকার ব্যাপার, আলাদা অলাদা এসি প্রয়োজন হয় যা অনেক ব্যায় বহুল। তাই আমি বলবো একটা পোর্টেবল এসি ক্রয় করে নিন। পোর্টেবল এসির দাম তুলনা মূলক কম হয় এবং সহজেই যেকোন প্রয়োজনে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেকোন ঘরে যেকোন সময় এসি নিয়ে যাওয়া যায়।
এসিতে দুষিত বাতাস পরিস্কার :
আপনাকে খেয়াল করতে হবে আপনার ঘরের ভিতরের বাতাস কেমন, যদি ঘরে বেশি ধুলা বালি উৎপাদন হয় বা ঘরে ময়লা যুক্ত দেওয়াল বা রং থাকে তাহলে কমদামের খারাপ ফিল্টারের এসিতে অনেক সমস্যা হতে থাকবে, ঠিক মত ঠান্ডা হবে না। এজন্য প্রয়োজনে আপনাকে ঘরের সকল রিপেয়ারিং সেরে নিতে হবে। অথবা ভালো মানের ফিল্টার যুক্ত এসি ক্রয় করতে হবে। বর্তমানের হাই-টেকনোলজির এসি গুলোতে ময়লা বাতাস টেনে পরিস্কার করে জীবানু মুক্ত করে ঘরে ছাড়ে। তাই আপনার ও পরিবারের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে ভালো ফিল্টার যুক্ত এসির মডেল ব্রান্ড গুলো ক্রয় করতে পারেন।
এসির বাতাস নিয়ন্ত্রণ করা :
আপনি যে এসিটি ক্রয় করবেন তাতে যেন ১টি এডজাস্টেবল থার্মোস্ট্যট, ২টি কুলিং স্পিট, ২টি স্প্যান স্পিট থাকে, যাতে ঘরের তাপমাত্রা ও বাতাস আপনার ইচ্ছা মত আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কারণ কমা ব্রান্ডের এসির সকল কন্ট্রোল প্যানেল থাকে না। আপনি চাইলেও সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তাই ভালো মানের এসি তে এগুলো আছে কি-না জেনে চেক করে এসি ক্রয় করবেন।
এসি কোম্পানির সার্ভিস ও সুবিধা :
আপনি যে কোম্পানির এসি ক্রয় করছেন তার সার্ভিস ও সুযোগ সুবিধা কেমন? আগে ভালো ভাবে খোঁজ নিন। কারণ তারা যে গ্যারান্টি ওয়ারেন্টি আপনাকে দিবে তা ঠিক-ঠাক প্রয়োজন মত পাবেন? না তারা এসি বাড়িতে সেট-আপ করে আর কোন পাত্তা দিবে না। মনে রাখবেন যদি কোম্পানির সার্ভিস খারাপ হয় তাহলে ভূলেও সেই কোম্পানির এসি ক্রয় করবেন না। আর যদি সার্ভিস খারাপ দেওয়া কোম্পানির এসি কিনেন তাহলে পরে আপসোস করতে হবে।
আদ্রতার পরিমাণ জেনে এসি কিনুন :
বেশি আদ্রতাপূর্ণ অঞ্চলে যদি অ্যালুমিনিয়াম কয়েলের এসি ক্রয় ও ব্যবহার করেন তাহলে আপনাকে অনেক সমস্যায় ভূগতে হবে। যদি আবহাওয়া ও আদ্রতার ব্যাপারে অত চিন্তু ভাবনা না থাকে, তাহলে বলবো কপার কয়েলের এসি ক্রয় করুন। যা সব আবহাওয়াতে সমান ভাবে চলবে। মনে রাখবেন ভালো জিনিসের একটু দাম বেশি হয়ে থাকে। তাই সব সময় দামের সাথে পণ্য ও সুযোগ সুবিধা বিবেচনা করে এসি ক্রয় করুন আর নিশ্চিন্তে থাকুন।
এসি নিয়ে টিপস্ গুলো ভালো লাগলে অথবা খারাপ লাগলে নিচে কমেন্ট করে দিন। আপনার কমেন্ট আমার লেখার অনুপেরনা অনেক বাড়িয়ে দিবে, ফলে আরো নতুন নতুন শিক্ষণীয় বিষয় আপনারদের শেয়ার করবো। যদি টিপস্ গুলো আপনাদের কাজে লাগলে নিজেকে ধণ্য ও স্বার্থক মনে করবো। এই লেখার বিনিময়ে আপনাদের কাছে শুধু লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার ছাড়া কিছুই কামনা করি না।